চিকিত্সা সেবা বিষয়ক ডেস্ক: অসুখ বিসুখ হলে বাংলাদেশের মানুষের একটি সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ফার্মেসিতে গিয়ে দোকানির পরামর্শে, এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা।
চিকিৎসকরা বলছেন, অপব্যবহারের কারণে এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা থাকছে না এবং সাময়িকভাবে রোগ সেরে গেলেও, রোগীকে পরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগতে হতে পারে। পরে কড়া ওষুধ ব্যবহার করেও রোগ সারছে না।
আন্তর্জাতিক একটি গবেষণা সংস্থা – আইসিডিআরবির এক গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
গবেষক ডা:মোহাম্মদ ইকবাল বলছেন, “পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। গ্রাম ডাক্তাররা এবং ফার্মেসীতে বিক্রেতারা অবাধে এন্টিবায়োটিক দিচ্ছেন। এর শতকরা ৭৫ ভাগই সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না।”
এই ওষুধ ব্যবহারের ব্যাপারে লোকজনকে সচতেন করার জন্যে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই আজ থেকে একটি প্রচারণা শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশের সাধারণ লোকজন আর ওষুধ বিক্রেতারা এন্টিবায়োটিক ব্যাবহারের বিষয়ে সচেতনতারও অভাব রয়েছে।
ঢাকার গ্রীণ রোড এলাকায় একটি ঔষধের দোকানে বিক্রেতা এবং ক্রেতাদের কয়েকজনের সাথে কথা হয়। দোকানটির বিক্রেতা বলছিলেন, সারাদিন তিনি চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন দিয়ে যত ঔষধ বিক্রি করেন, তার শতকরা ৭০ভাগ প্রেসক্রিপশনেই এন্টিবায়োটিক ঔষধ দেয়া হয়।
ঐ দোকানে শিশু সন্তানের জ্বরের চিকিৎসার জন্য ঔষধ নেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী আনিসুল হক।
তিনি বলছিলেন, চিকিৎসক এন্টিবায়োটিক দিয়েছেন এবং তার শিশু জীবন বাঁচানোর চিন্তা থেকে তিনি বাধ্য হয়ে তা কিনছেন। আরও কয়েকজন ক্রেতাও সেখানে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন দিয়ে এ্যান্টিবায়োটিক কেনেন।
তবে জিল্লুর রহমান নামের একজন চাকরিজীবীকে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ কিনতে দেখা যায়।
তিনি বলছিলেন, “আমার জ্বর হয়েছে।সামান্য এই জ্বরের জন্য ডাক্তারের কাছে গেলে, ভিজিট পাঁচশ টাকা দিতে হবে। তারপর ডাক্তার অনেক টেস্ট দেবে এবং পাঁচ হাজার টাকার মতো নেমে যাবে।”
“সে কারণে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে নিজেই এই ডিসপেনসারিতে এসে এন্টিবায়োটিক নিলাম,” – বলেন তিনি।
শুধু ঢাকায় নয় – সারা বাংলাদেশেই এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে।
ঢাকার বাইরের চিত্রটা আরও ভয়াবহ বলে গবেষকরা বলছেন। আন্তর্জাতিত গবেষণা সংস্থা আইসিডিডিআরবি’র একজন গবেষক ডা:মোহাম্মদ ইকবাল বলছিলেন, তাদের এখনকার এক গবেষণায় তারা উদ্বেগজনক পরিস্থিতিই দেখতে পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেছেন, “নিবন্ধিত চিকিৎসক, যারা এ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন। তারা ছাড়াও অনেকে প্রেসক্রিপশনে এন্টিবায়োটিক লেখেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডীন অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ বলেছেন, এ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এর জন্য ঔষধ বিক্রেতারা যেমন দায়ী – চিকিৎসকরাও এই দায় এড়াতে পারে না বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেছেন, এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের কারণে এর কার্যতারিতা থাকছে না এবং আরও কড়া ঔষধ ব্যবহার করেও রোগ সারছে না।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বন্ধ করা এবং মানুষের সচেতনতা বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বঢ় ধরণের কোন পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। এখনই বিষয়টিতে সংশ্লিষ্টদের নজর দেয়ার তাগিদও দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।